সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
ওয়াসিম উদ্দিন সোহাগ তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) থেকে কালের খবরঃ গত ২০ মার্চ শুক্রবার দৈনিক বাংলা সময়ে প্রকাশিত “তাড়াইলে হারিকেন ও তুষ পদ্ধতিতে হ্যাঁচারীর বিপ্লব ” শিরোনামে হ্যাচারী শিল্পের যে বিপ্লবের কথা ওঠে এসেছিল। তা করোনার কারণে আজ চরম ক্ষতির সম্মুখীন ।
সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায় ,তাড়াইল উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক পোল্ট্রি হ্যাঁচারীতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০-২৫ লক্ষ হাঁসের বাচ্ছা উৎপাদন করা হয়। যা বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলার পাইকারী আড়ৎদারেরা ক্রয় করে থাকে। আড়ৎদারগণের কাছ থেকে শত শত হকাররা ক্রয় করে বাংলাদেশের সব বিভাগের জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকের কাছে বিক্রয় করে থাকে। কিন্তু আজ করোনা ভাইরাসের কারণে সবই গুড়েবালি। করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাচার জন্য নিজেদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ হাঁসের বাচ্চা আটকে গেছে। হ্যাঁচারীতে বাচ্চা পালনের বা রাখার কোনো ব্যবস্থা নাই বা থাকেনা। প্রতিদিনের উৎপাদিত বাচ্চা প্রতিদিনেই বিক্রয় হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের কারণে আটকে আছে প্রতিটি হ্যাঁচারীর উৎপাদিত বাচ্চা। হ্যাঁচারী উদ্যেগক্তাগণ সর্বস্ব হারাতে বসেছে। একদিকে যেমন করোনা থেকে বাঁচার তাগিদ অপর দিকে হ্যাঁচারীতে ফোটানো বাচ্চা বিক্রয় করার হতাশা। এ বিষয়ে হ্যাঁচারী ব্যবসায়ী আজিজুল হক আন্জুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শত কষ্ট করে আমার এই ব্যবসাকে গড়ে তুলেছি। করোনার কারণে আজ সব শেষ। কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা।
হ্যাচারী ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, আগামী দশ দিনের মধ্যে আমার হ্যাঁচারীতে ৪৮০০০ হাজার হাঁসের বাচ্চা ফুটবে। যা কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগন্জ, ময়মনসিংহ অঞ্চলের আড়ৎদারগণের কাছে বিক্রি হত, করোনার কারণে গাড়ী চলাচল বন্ধ। আড়ৎ বন্ধ। এখন কি করব তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছি না। আরেক সফল ব্যবসায়ী আঃ খালেকের সাথে দেখা কথা হলে তিনি জানান, আমার হ্যাঁচারীতে আগামী দশদিনে প্রয় ৫০,০০০ হাজার বাচ্চা ফুটবে। দশ হাজার বাচ্চা বিক্রির জন্য সিরাজগন্জের উল্লাপাড়া থানার চান মিয়ার সাথে কথাবলি, তিনি প্রতি পিস হাঁসের বাচ্চার দাম ৭ টাকার কথা বলেছে। অথচ একটি ডিমের দাম ১৪ টাকা। তাছাড়া তার কাছে পাঠাতে যতগুলি বাচ্চা নষ্ট হবে তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে। সফল ব্যবসায়ী ওমর ফারক বলেন, একটি ডিম ক্রয় করতে ১৩-১৪ টাকা লাগে এই বছর বাচ্চা উৎপাদনের শতকরা হার ৫৫-৬০ % করোনার আগে বাচ্চার দাম ছিল ২৫-২৬ টাকা আর এখন ৭ টাকাও নিতে চায়না।
ব্যবসায়ী জাকারিয়া সুমন ও মতিউর রহমান সরল জানায়- তাড়াইলের হ্যাচরীগুলিতে যত হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন হয় তা বিভিন্ন বিভাগে খুচরা ও পাইকারি আড়তে পাঠানো হয় সেখান থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হকাররা দলবেধে এসে নিয়ে যায়। এখন করেনা ভাইরাসের কারণে হকাররা আড়তে আসতে পারেনা। যার কারণে আমাদের উৎপাদিত হাঁসের বাচ্চা গুলি বিক্রি করা যাচ্ছে না। বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি। দিগদািইড় ইউনিয়নের হ্যাঁচারী ব্যবসায়ী গোলাপ হোসেন বলেন, আমি ব্যাংক ও এনজিও থেকে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেছি। এই দেখুন বাচ্চা আটকে আছে। নষ্ট হচ্ছে অগণিত। এখন পানির ধরেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। কি করব ভেবে পাইনা। হ্যাঁচারী ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, বাচ্চা উৎপাদনের হার ৫৫-৬০% কৃষকের কাছ থেকে ১৪ টাকা করে ডিম এনেছি, তাদেরকেই অনুরোধ করে ৭ থেকে ৮ টাকা দর দরে বাচ্চা বিলি করছি। এভাবে পানির দরেও নিতে চায়না। নাওয়া খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দামিহা গ্রামের মহিলা উদ্যেগক্তা চম্পা আক্তার বলেন, মুরগির ফার্ম দিয়েছিলাম রোগবালাইয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। ঋণ করে এই ঘরেই হ্যাচারী দিয়েছি।এখন আবার করোনার সমস্যা।স্বামী হারা ছোট ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে এখন আমি কি করব।এ রকমভাবে হ্যাঁচারী উদ্যোগক্তা, নয়ন, ইয়াছিন,রহমত,জসিম উদ্দিন, রুপন,হাছলা গ্রামের আ.হাকিম, দামিহা গ্রামের মন্নাছ মিয়া, সাইব আলী, শামসুল হক,রাহেলা গ্রামের সানাউল্লাহ, তোতা মিয়াসহ সকলের মাঝেই হতাশার চাপ লক্ষ করা যায়।